শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কে জানুন
শিশুর প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তার কথাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সন্তানের ভালো কাজের প্রশংসাও করুন। শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা
শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কে নিচে ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হল:- এটি পিতামাতার কাছে পরিষ্কার করা উচিত যে, সন্তানরা তাদের জীবনের একটি অমূল্য সম্পদ এবং সন্তানের মাধ্যমে তাদের জীবন ধন্য হয়।
- শিশু শিশু হলেও সে একজন পরিপূর্ণ মানুষ। এই সন্মান তাকে করলে তার ভিতরে আত্মসম্মান বোধ জাগ্রত হবে।
- শিশুর কাজের প্রশংসা করতে পারেন, তার কাজের সমালোচনা না করে কীভাবে কাজটিকে সুন্দর করা যায়সেই প্রসঙ্গে তার সাথে আলোচনা করুন।
- শিশুর প্রতিটি মতামত গুরুত্ব সহকারে শুনতে হবে। শিশুর সাথে তার পছন্দ-অপছন্দের কথা বললে তার চিন্তার দক্ষতার বিকাশ ঘটবে।
- শিশু যে জিনিস ব্যবহার করে তা যদি তার পছন্দ অনুযায়ী কেনা সম্ভব হয়, তাহলে শিশুর মধ্যে মতামত দেওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে। তার পছন্দের বিছানার চাদর, পড়ার টেবিল, কী পোশাক পরবেন, এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
- আমরা অনেকেই বাচ্চাকে মেঝেতে নামতে দেই না। খেলনা নিয়ে খেলতে দেই না। আমরা আশঙ্কা করছি যে শিশুটি পড়ে যেতে পারে বা আহত হতে পারে। কিন্তু শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য, তারা হাঁটবে, খেলবে- এ জন্য তাদের সন্তানকে নিয়ে পিতামাতার ভয় পাওয়া উচিত নয়। তাকে তার মতো থাকতে দেওয়া উচিত।
- অনেক সময় বাবা-মা সন্তানের সব কাজ করে দেন। এটা করা ঠিক নয়। এতে করে শিশু দায়িত্ব নিতে শেখে না। দায়িত্ব নিতে ভয় পায়। শিশুকে ছোট ছোট দায়িত্ব দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, শিশু খাওয়ার পরে তার প্লেট পরিষ্কার করবে।
- শিশুরা যদি কিছু করতে চায় তবে আমরা তা নিষেধ করব না যদি না তা তাদের জন্য ক্ষতিকর হয়। আমরা তাদের সাহস দেব। আমি তার কাজে তাকে সমর্থন এবং উৎসাহিত করব।
- অনেক সময় বাচ্চাদের দামি খেলনা ভাঙলে আমরা বকাঝকা করি। শিশুরা কোন কিছু ভেঙ্গে বা নষ্ট করার সময় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়।
- আপনি যদি আপনার সন্তানের সাথে প্রতিশ্রুতি দেন তবে আপনার তা পালন করা উচিত। সেই সঙ্গে শিশুকে ভালো কিছু করার জন্য পুরস্কৃত করতে হবে।
শিশুর মানসিক বিকাশে করণীয় কিছু কাজ
১। সুস্থ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ
একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাকে অনেক প্রভাবিত করে এবং এটি তার ব্যক্তিত্বে প্রতিফলিত হয়। শিশুর সার্বিক বিকাশের সাথে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজকের শিশুরা আগামী দিনের নাগরিক। তাই তার সুন্দর ও নির্ভীক শৈশব নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাবা-মা সহ পরিবারের সকলের।
২। সৃজনশীল খেলনা
শিশুদের খেলনা উদ্ভাবক, নাটকীয় এবং সৃজনশীল হওয়া উচিত। বয়সের উপর নির্ভর করে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। ঘরের ভিতরে এবং বাইরে খেলা যায় এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য বেশি সহায়ক। শিশুদের এমন খেলনা দেওয়া উচিত, যা তাদের বুদ্ধি বিকাশে সাহায্য করে।
৩। ছবি আঁকা
দীর্ঘদিনের গবেষণায় দেখা গেছে যেসব শিশুদের শৈশবে আঁকার সুযোগ দেওয়া হয় তারা বেশি মেধাবী এবং বুদ্ধিমান হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, শিল্পচর্চার মাধ্যমে শিশুদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। শিশুরা যখন উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে বিভিন্নভাবে শিল্পচর্চার সুযোগ পায় তখন তাদের সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পায়। তখন সে ব্যতিক্রমীভাবে চিন্তা করতে এবং ভাবতে শেখে, যা তাকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে শেখায় এবং যে কোনও পরিস্থিতিতে তখন সে সহজেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
৪। সংগীতচর্চা
সঙ্গীত যেমন আমাদের সুখ-দুঃখের মধ্যে বিনোদন দেয়, তেমনি শৈশব থেকেই অনেক শারীরিক ও মানসিক কার্যের উপর সঙ্গীত গভীর প্রভাব ফেলে। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুদের গানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া জরুরি। সঙ্গীত মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।৫। বই পড়া
বই শিশুর মনে সুপ্ত ধারণা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এক সময় শিশুরা তাদের মা, খালা, নানীর কাছ থেকে ঠাকুমা ঝুলির গল্প শুনে সময় কাটাত। এখন ব্যতিক্রম ঘটছে। শিশুরা এখন সেসব পুরনো গল্প শুনতে পায় না। তাই ছোটবেলা থেকেই গল্পের বইয়ের পাশাপাশি শিক্ষামূলক বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গল্পের বই পড়া শিশুর মানসিক বিকাশকে প্রসারিত করে এবং অনুভূতি প্রকাশের ক্ষমতা বাড়ায়।শিশুর সার্বিক বিকাশে শারীরিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। একজন অভিভাবক হিসেবে আপনাকে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
শেষ কথা
শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে আমাদের জানান এবং আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
এরকম আর নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে anyupay এর সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।