গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন
একজন পাঠক বলছেন যে এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন কিভাবে নিব। আমার কাছে তৈলাক্ত ত্বক একটি বিরক্তি কর ব্যাপার । তার উপরে গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়াটা একটু বেশিই কঠিন। তাই এর সমাধান জানতে চেয়েছেন
আমাদের ত্বকের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল অপরিহার্য যা আমাদের ত্বককে সুস্থ রাখে, তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং আমাদের ত্বককে শুষ্ক হতে বাধা দেয়। এই প্রবন্ধে শুধু মুখের ত্বক নয়, গরম আবহাওয়ায় মাথা, হাত ও পায়ের ত্বকের তৈলাক্ততা, গরম আবহাওয়ায় তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়ার কিছু উপায় ও টিপস দেওয়া হয়েছে।
গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন?
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু সুস্থ ত্বক সবাই চায়। বিভিন্ন কারণে যেমন জেনেটিক্স, ডায়েট ইত্যাদির কারণে ত্বকের ধরন ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। আবার শীতকালে ত্বক যেমন বেশি শুষ্ক থাকে তেমনি গরমে অনেকের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়ে যায়। এই সমস্যা নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। কারণ, তৈলাক্ত ত্বকে ময়লা দ্রুত আটকে যায়, ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়, ব্রণ বা পিম্পলের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। গ্রীষ্মে এই একগুঁয়ে গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন সে সম্পর্কে এখানে কিছু টিপস রয়েছে। শুধু ধৈর্য সহকারে ধাপ অনুসরণ করুনমুখের ত্বকের যত্ন
- তৈলাক্ত ত্বক ছিদ্র বড় করে। তেল জমে এগুলো আটকে যায় এবং ব্রণও হয়। তাই গরমে প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে তৈলাক্ত ত্বককে রক্ষা করতে প্রতিদিন ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আপনি ঘরে বসেই আপনার ত্বকের যত্ন নিতে পারেন।
- তৈলাক্ততা দূর করতে শসার রস খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন শসার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন।
- এটি ছাড়াও, আপনি যদি এটি স্ক্রাব হিসাবে ব্যবহার করতে চান তবে আপনাকে এর সাথে চালের গুঁড়া মেশাতে হবে। যাদের মধুতে অ্যালার্জি নেই তারা এই মিশ্রণে একটু মধু যোগ করতে পারেন। সপ্তাহে দুইবার এই প্যাকটি ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার হবে। ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, ব্রণ থাকলে স্ক্রাবিং করা যাবে না।
- সমপরিমাণ গোলাপজল এবং লেবুর রস দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন এবং এটি আপনার মুখে লাগিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। তুলো দিয়ে আস্তে আস্তে মুখ পরিষ্কার করুন। এতে ব্রণ ও পিম্পলের দাগ দূর হবে।
- এক চা চামচ বেসন, সামান্য হলুদ গুঁড়া, টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে হবে এবং আধা ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
মাথার ত্বকের যত্ন
- তৈলাক্ত ত্বকের মানুষেরও মাথার ত্বক তৈলাক্ত থাকে। চুলে ময়লা জমে ময়লা বেশি হয় এবং খুশকির প্রবণতা বেড়ে যায়। গ্রীষ্মে, তেলের রাশ সমস্ত বাঁধ ভেঙে দেয়। যাদের নিয়মিত বাইরে যেতে হয় তারা প্রতিদিন একটি হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। তা না হলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন শ্যাম্পু করা উচিত। অনেক সময় তৈলাক্ত ত্বকের কারণেও চুল রুক্ষ হয়ে যায়। তারপর কন্ডিশনার দিতে পারেন। অন্য সময়ে এটি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। এ সময় যাদের চুল তৈলাক্ত তাদের খুব দ্রুত ময়লা হয়ে যায়।
- খুশকির সমস্যা সমাধানে ঘরেই তৈরি করতে পারেন প্যাক। সারারাত মেথি ভিজিয়ে রাখার পর টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মাথায় লাগান। কিছুক্ষণ পর চুল ধুয়ে ফেলুন। মাসে একবার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
- নারকেল তেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে সপ্তাহে একবার চুলে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। তারপর গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে ছেঁকে নিয়ে মাথায় মুড়ে রাখুন ১০ মিনিট। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে। তারপর শ্যাম্পু করুন।
- চায়ে একটি ট্যানিক উপাদান রয়েছে যা চুল থেকে অতিরিক্ত তেল দূর করতে সাহায্য করে। একটি টি ব্যাগ হালকা গরম পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন অথবা চায়ের চুলায়ও জ্বাল দিতে পারেন। এবার এটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণ পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করুন।
- বেকিং সোডা চুল থেকে তৈলাক্ততা দূর করতে সাহায্য করে। হালকা গরম পানিতে দুই টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে চুলে লাগান। কিছুক্ষণ রেখে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- ভিনেগার ব্যবহার করলে চুলের তৈলাক্ততাও কমে। একটি স্প্রে বোতলে এক কাপ জলের সাথে 3 টেবিল চামচ ভিনেগার মিশিয়ে সারা চুলে স্প্রে করুন। 20 মিনিট পরে, হালকা গরম জল দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের তৈলাক্ততা কমিয়ে চুলকে চকচকে করে তুলবে।
হাত পায়ের যত্ন
- শসার রস, গাজরের রস, চালের গুঁড়া, দুধ এবং এক চা চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে অন্তত দুবার হাত ও পায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- গরমে যাদের তৈলাক্ত ত্বক তাদের জন্য আরও কিছু প্যাক
- শসার রসের সাথে কর্নফ্লাওয়ার বা লাল ময়দা মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটি মুখে ও ঘাড়ে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
- বড় ছিদ্রের সমস্যা হলে একটু বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত। এ জন্য ডিমের সাদা অংশ মুখে লাগিয়ে তারপর টিস্যু পেপার চেপে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে আলতো করে টিস্যু পেপার তুলে পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। ত্বক টানটান মনে হবে।
- নিয়মিত অ্যালো (অ্যালোভেরা জেল) দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা যায়। এটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
- রসুনের পেস্ট তৈলাক্ত ত্বক দূর করার জন্যও ভাল কারণ রসুন অ্যান্টি-বায়োটিক সমৃদ্ধ।
- গোলাপ জলের সাথে দুই চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে সারা মুখে পেস্ট লাগান এবং 10-15 মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
- এক চামচ চন্দন গুঁড়ো এক চামচ মুলতানি মাটি এবং জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি আপনার মুখে 10-15 মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং তারপর ধুয়ে ফেলুন।
- আপেলের রস এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- একটি পাত্র জল গরম করুন এবং চা পাতা দিয়ে ফুটান, তারপর একটি তোয়ালে দিয়ে আপনার মুখ ঢেকে 3 মিনিটের জন্য আপনার মুখে গরম রাখুন।
বাস্তবতা হল, তৈলাক্ত ত্বকের অতিরিক্ত যত্ন প্রয়োজন। ত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। দিনে তিনবারের বেশি ফেসওয়াশ বা ক্লিনজার ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রসাধনী থেকে ফেসওয়াশ—সবকিছুই হতে হবে তেলমুক্ত। তবে গরমে সঠিকভাবে পরিষ্কার করলে এ ধরনের ত্বকের সমস্যা এড়ানো যায়।
তৈলাক্ত ত্বকের অসুবিধা
তৈলাক্ত ত্বকের উপকারিতা হল যে তেলটি বলিরেখা এবং মুখের যে কোনও বিবর্ণতা প্রতিরোধ করে। তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা কিন্তু কম নয়। তৈলাক্ত ত্বক সহজেই আটকে যায় এবং অতিরিক্ত তেল ছিদ্রগুলিকে আটকে দেয়। এতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে ব্রণের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই বিড়ম্বনার মাত্রা বেড়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ত্বক পরিষ্কার না রাখার কারণে ব্রণ দেখা দিতে পারে,তৈলাক্ত ত্বকের সুবিধা
তবে অনেকেরই স্বাভাবিকভাবেই ত্বক তৈলাক্ত এবং কিছুক্ষণ পর ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। কখনও কখনও ব্রণ ব্রেকআউট ঘটে। তৈলাক্ত ত্বকে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। তৈলাক্ত ত্বকের ছিদ্র বড় করে। সমস্যা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। এর সমাধানও আছে
গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে করা কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
গরমে মেয়েদের ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবে?
গরমে মেয়েদের ত্বকের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ আলাদা। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে, আপনি গ্রীষ্মে শীতকালে যে ধরনের ব্যায়াম করেন তা করতে পারেন না। চলুন জেনে নেওয়া যাক গ্রীষ্মকালীন ত্বকের যত্নে আপনি কী করতে পারেন এবং কী ধরনের পরিবর্তন আনতে পারেন।- সাবান পরিবর্তন করুন: যে সাবান বা ফেস ওয়াশ আপনি শীতকালে ব্যবহার করেন তা , গ্রীষ্মে আপনার মুখ ধোয়ার জন্য ব্যবহার করেন না।
- কারণ গরমে মুখের গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল বের হয়ে যায়। তাই গরমে আলাদা সাবান ব্যবহার করুন।
- সানস্ক্রিন ব্যবহার: সূর্যের তাপে এ সময় ত্বক পুড়ে যেতে পারে। এটি এড়াতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না। রোদে বের হওয়ার আগে মুখ, হাত, পা এবং শরীরের অন্যান্য অনাবৃত অংশে সানস্ক্রিন লাগান।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: অতিরিক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে এমন ক্রিম বা সিরাম কিনুন। অন্যদিকে প্রয়োজনে একটু বেশি টাকা খরচ হলেও ব্যবহার করুন।
- ফল খান: গরমে বেশি করে ফল খান। এতে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকবে। তা ছাড়া ফলের মধ্যে থাকা ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
- বেশি পানি: শরীরে এ সময় বেশি দূষিত পদার্থ বা টক্সিন জমতে পারে। তাই গরমে বেশি করে পানি পান করা উচিত। এতে ত্বক উজ্জ্বল হবে।
- টোনার ব্যবহার: গরমে টোনার ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের তৈলাক্ততা কমায় এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে। সেই সঙ্গে টোনার ত্বককে এক ধরনের প্রাণশক্তি দেয়।
- কম মেকআপ: গরমে যতটা সম্ভব কম মেকআপ করুন। এমনিতেই এ সময় ঘাম বেশি হয়। এর ওপরে মেকআপ লাগালে ত্বকে চাপ পড়বে। পরিবর্তে, কিছু মেকআপ পণ্য কিনুন যা আপনার ত্বককে গ্রীষ্মের অনুভূতি দেবে।
কোন টিপস প্রয়োগ করার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। অন্যথায় বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে।
গরমে ত্বকের যত্ন
- সূর্যের রশ্মি থেকে দূরে থাকা: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য প্রথমেই আমাদের যা করতে হবে। এ জন্য গ্রীষ্মের রোদে বের হওয়ার সময় সানব্লক ব্যবহার করতে হবে।
- হাইড্রেটেড রাখা: গ্রীষ্মে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল শরীর এবং ত্বক উভয়ই হাইড্রেটেড রাখা, গ্রীষ্মের সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত জল নির্গত হওয়ার কারণে, শরীরের সাথে ত্বকও পানিশূন্য হতে পারে। এর জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন, সারাদিনে কমপক্ষে 8 থেকে 10 গ্লাস
রোদে পোড়া ত্বকের যত্ন কিভাবে নিব?
সকাল সাতটা থেকে সূর্য উঠছে, তা থেকে বাঁচা খুব কঠিন! বিশেষ করে যাদের কলেজ বা অফিসের কারণে প্রতিদিন ঘরের বাইরে পা রাখতে হয় তাদের জন্য রোদে পোড়ার কারণে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া ত্বকের পুরোনো আভা ফিরিয়ে আনা বড় ঝামেলার। কিন্তু আপনি যদি এত কিছু না ভেবে কাজ শুরু করেন, তাহলে আপনি সহজেই দেখতে পাবেন যে উজ্জ্বল ত্বক আবার ফিরে এসেছে। এটা কিভাবে সম্ভব, জানতে চান? পদ্ধতিগুলি খুব সহজ, খুব কার্যকর। তবে এটি কিছুটা সময় নেবে এবং নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত।
আরও জানুনঃ