জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম - anyupay.com

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম

আপনি নিশ্চয়ই জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করতে চান? তাহলে চলুন আজ জেনে নেই জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন এ কি কি লাগবে এবং কিভাবে অনলাইনে বয়স সংশোধন ফরম পূরণ করবেন কোথায় জমা দিবেন। 

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম

জানেন কি আগে যারা জন্ম নিবন্ধন করেছিলেন ঠিক তাদের ক্ষেত্রে, দেখা যায় তাদের জন্ম নিবন্ধনে থাকা জন্ম তারিখ ও অন্যান্য ডকুমেন্টের জন্ম তারিখের সাথে অনেকসময়  মিল থাকে না। আসলে মূলত এর কারণ অসতর্কতা। অসতর্কতাবশত আমরা যখন জন্ম নিবন্ধন করার সময়, আমাদের বিভিন্ন ডকুমেন্টের সাথে জন্ম তারিখ ও তথ্য মিল রেখে দিয়াছিলাম  ওই সময় কর্তব্যরত যিনি ছিলেন তাদের গাফিলতির কারণে সঠিকভাবে তথ্য পূরণ  না করার কারণে বয়স গরমিল অসুবিধায় পড়তে পারেন

বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন সিস্টেমের অনলাইন এর কারণে জন্ম তথ্য যাচাই করার মাধ্যমেই বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়  জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন ব্যাংক একাউন্ট বা পাসপোর্ট  করতে হয়। এ কারনে জন্ম নিবন্ধনের বয়স অবশ্যই অন্যান্য ডকুমেন্টের, সাথে মিল থাকতে হবে। এবার নিশ্চই আপনারা যারা জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধন করতেচান তাহলে জেনে নিন জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম এবং কি কি লাগে,এবং অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার ফরম কিভাবে পূরণ করবেন। বিস্তারিত জানবোঃ

আমাদের আর্টিকেল টি পাবেন গুগল নিউজ  পাবলিকেসনে

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করতে কি কি লাগে

  •  শিশুর টিকা কার্ড যেটা ই পি আই কার্ড বলে 
  • পিএসসি,জেএসসি,এসএসসি বা সমমান শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন সনদ যেখানে সঠিক বয়স আছে এমন কিছু দিতে হবে
  • জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি 
  • পুরাতন হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন  কার্ড (ইস্যু সম্পর্কিত ফাইল , যদি হাতে লেখা পুরাতন জন্ম নিবন্ধনে সঠিক জন্ম নিবন্ধন থাকে)
  • হাসপাতাল -চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের এমন ছাড়পত্র  জন্ম গ্রহণের সময় যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া হয়েছিল
  • জন্মের সময় হাসপাতাল কর্তৃক প্রদত্ত জন্ম সনদের সত্যায়িত কপি বা পুরণকৃত আবেদনপত্রে বার্থ এটেডেন্সের এর প্রত্যয়ন বা ইপিআই-টিকা কাড) কার্ডের সত্যায়িত আনুলিপি 
  • পিতার জাতীয় পরিচয়পত্র বা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র-যদি অস্বাভাবিক জন্ম তারিখ দেওয়া থাকে এবং অন্য কোন প্রমান না থাকে

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিয়ম

আপনার  জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করারজন্য প্রথমে সঠিক বয়স প্রমাণের ডকুমেন্ট আপলোড করে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করুন এরপর অনলাইন আবেদনটিতকে ২ কপি প্রিন্ট করুন- প্রমাণপত্র সহ আবেদনটির ১ কপি ইউনিয়ন পরিষদ-পৌরসভা,কাউন্সিলর অফিসে জমা দিন এবং অন্যটি উপজেলা বা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অফিসে জমা দিন। আবেদনটি যাচাই করার পর অনুমোদন করা হলে, বয়স সংশোধন হবে।

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

প্রথম ধাপ ১ঃ জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার ফরম পূরণ করুন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার ফরম পূরণ করতে ভিজিট করুন https://bdris.gov.bd/ -এখানে নিচে একটি পেইজ আসবে, সেখানে মেন্যু থেকে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন আবেদন মেন্যুতে ক্লিক করুন্‌
  • এবার আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে আপনার নিবন্ধন এন্ট্রি বের করুন 
  • জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করুন
  • এখান থেকে নির্বাচন করুন বাটনে ক্লিক করুন।
  • এরপর নিচে  একটি পেইজ পাবেন শেখানে সব গুলো তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে এবং প্রমাণ পত্র আপলোড করে আবেদনটি সাবমিট করতে হবে
  • জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করার ফরম
  • যদি আপনি উপরের তথ্যগুলো পূরণ করার পর সাবমিট বাটনে ক্লিক করে আবেদনটি জমা দিন।
যে সতর্কতাঃ
 আপনার আবেদন জমা দেয়ার পর অবশ্যই অ্যাপ্লিকেশন আইডি-কার্ড কোথাও লিখে নিন;
  • তারপর আবেদন প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে প্রিন্ট করে নিন পিডিএফ হিসেবে সেভ করে নিন আপনার প্রিন্টার না থাকলে, এলাকার কোন কম্পিউটার সেবার প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাপ্লিকেশন আইডি ও জন্ম তারিখ দিয়ে ২ কপি জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্র প্রিন্ট করে নিন;
দ্বিতীয় ধাপ ২ঃ আবেদনটি ইউনিয়ন-পৌরসভা- কাউন্সিলর অফিসে জমা দিন
  • বয়স সংশোধনের আবেদনটি এবং সঠিক বয়স প্রমাণের আপলোড করা ডকুমেন্টের একটি ফটোকপি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ- পৌরসভা বা কাউন্সিলর অফিসে জমা দিন-
  • তারা আপনার থেকে প্রয়োজনীয় ফি নিবে এবং আপনার আবেদনটি রিসিভ করে( Higher Authority)উচ্চতর কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য পাঠাবে।
 তৃতীয় ধাপ ৩ঃ উপজেলা/উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন ও প্রমাণপত্র জমা দিন
  • আপনার এই ধাপে আবেদনের কপি ও বয়স প্রমাণের ডকুমেন্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় বা আপনার এলাকা অনুযায়ী উচ্চতর- কর্তৃপক্ষের অফিসে জমা দিন।
  • উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অফিস কোনটি বা কোথায় পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য যেতে হবে তা আপনার ইউনিয়ন পরিষদ[পৌরসভা অফিস থেকে জেনে নিতে পারবেন।
চতুর্থ ধাপ ৪ঃ আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন তথ্য যাচাই ও সনদ সংগ্রহ করুন
  • ৩/৪ দিন পর অনলাইনে আপনার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন তথ্য যাচাই করে দেখুন যে আপনার আবেদনটি অনুমোদন হয়েছে কিনা  যদি অনুমোদন হয়  আবার ইউনিয়ন পরিষদ- পৌরসভা অফিস থেকে সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করুন ব্যাস আপনার কাজ শেষ

জন্ম নিবন্ধন বয়স বাড়ানোর  উপায়

অনেক সময় দেখা যায় ভুলবশত জন্ম নিবন্ধনে বয়স বেশি বা কম দেয়া হলে আপনি অবশ্যই উপযুক্ত প্রমাণ পত্র, আপলোড করে অনলাইনে আবেদন করে আপনার বয়স বাড়াতে বা কমাতে পারবেন যদি আপনার শিশুর জন্ম নিবন্ধনের সময় টিকা- কার্ড ব্যবহার করে থাকেন এবং দেখা গেল যে- আপনার সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করার পরই ভুল ধরা পড়ল, তবে আপনি অনলাইনে বা ফরম পূরণকরে টিকা কার্ড পুনরায় জমা দিয়েই জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে পারেন। আবার এমন হতে পারে, আপনার জন্ম তারিখ ১৯৮০ কিন্তু জন্ম নিবন্ধন করার সময় কম্পিউটার অপারেটর বা আপনাদের ভুলবশত যদি এটি ১৯৯৮ হয়ে গেছে এক্ষেত্রে আপনি আপনার সঠিক যে কোন একটি প্রমাণ যেমন, এসএসসি সার্টিফিকেট বা পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা প্রযোজ্য অন্যান্য ডকুমেন্ট দিয়ে সংশোধন করাতে পারেন

জন্ম নিবন্ধন বয়স কমানোর উপায়

আপনার যদি নিজের- এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র বা জে.এস.সি এস.এসসি, এইচ.এসসি বা যে কোন বোর্ড পরীক্ষার- সনদের সঠিক জন্ম তারিখ থাকে তা দিয়ে আপনি জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করতে পারেন আপনার যদি কোন প্রমানই না থাকে এবং জন্ম তারিখ অস্বাভাবিক ভুল হয় যেমন, আপনার বয়স ২০ বছর কিন্তু জন্ম সনদ অনুসারে ৩৫/৪০ বছর হয়ে যায়  সেক্ষেত্রে আপনার পিতা এবং মাতার জন্ম নিবন্ধন বা এনআইডি সাবমিট করতে পারেন।

আবার এমন  হতে পারে যে আপনার ৩/৪ভাই বোন রয়েছে শে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বড় ভাইয়ের চেয়ে আপনার বয়স বেশি লেখা হয়েছে যেটা  আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল। এক্ষেত্রে আপনার পিতার ও ভাইবোনে জন্ম সনদ সাবমিট করে আবেদন করতে পারবেন অর্থাৎ জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের ক্ষেত্রে সঠিক বয়স প্রমাণের  সাপেক্ষে কোন ও না কোন প্রমান পত্র আপনাকে উপস্থাপন করতে হবে। চুলুন জেনে নেই জন্ম নিবন্ধনে বয়স সংশোধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে

জন্ম নিবন্ধন বয়স পরিবর্তন

আপনার ইচ্ছাকৃত ভাবে বা ভুল না হলেও অসৎ উদ্দেশ্যে বা জালিয়াতির জন্য কেউ জন্ম নিবন্ধন বয়স কমানো- নো বা পরিবর্তন করতে যাবেন না কারণ এটি করা দন্ডনীয় অপরাধ যার কারনে আপনার জেল  জরিমানা হতে পারে তাই সাবধান জন্ম তারিখ কমানো বা বয়স ইচ্ছাকৃত ভাবে কমানোর জন্য অনেকে একাধিক জন্ম নিবন্ধন করতে যায়। যদিও এখন তা করা অনেকটাই কঠিন। এধরণের কাজ অবশ্যই আইনগত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং কেউ এ ধরণের কাজে জড়াবেন না।

আসলে জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি কত তা অধিকাংশ অভিভাবকই জানেন না। আর এরই সুযোগ নিচ্ছেন কতিপয়  ইউনিয়ন পরিষদ,পৌরসভা ও সিটিকর্পোরেশনের কিছু অসাধু কর্মচারী বৃন্দ  তাই আজকে অভিভাবকদের ভোগান্তি  অবগত করানোর জন্য জন্মনিবন্ধন সনদের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি সংবলিত গেজেট আপলোড করা হল তা আপনারা নিজেই দেখে নিন

নিবন্ধনধারী ব্যক্তি

ফী 

জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫দিন পর্যন্ত কোন ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন 

একেবারে ফ্রি

জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫দিন পর হতে ৫বছর পর্যন্ত কোন ব্যক্তির জন্ম বা নিবন্ধন (সাকুল্যে) 

দেশে ২৫টাকা ও বিদেশে ১মার্কিন ডলার


জন্ম বা মৃত্যুর ৫বছর পর কোন ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন সাকুল্যে 

দেশে ৫০ টাকা ও বিদেশে ১মার্কিন ডলার

জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য আবেদন ফি 

দেশে ১০০টাকা ও বিদেশে ২মার্কিন ডলার


জন্ম তারিখ ব্যতীত নাম,পিতার নাম,মাতার নাম,ঠিকানা ইত্যাদি অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন ফি 

দেশে ৫০ টাকা ও বিদেশে ১মার্কিন ডলার


বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মূল সনদ বা তথ্য সংশোধনের পর সনদের কপি সরবরাহ 


দেশে বিনা ফিসে ও বিদেশে বিনা ফিসে

বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সনদের নকল সরবরাহ 

দেশে ৫০টাকা ও বিদেশে ১মার্কিন ডলার



জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ফি

জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন সাধারণ প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্নঃ  জন্ম নিবন্ধনে বয়স কমানো যায় কিভাবে?


উত্তরঃ যদি সঠিক বয়স প্রমাণের জন্য উপযুক্ত ডকুমেন্ট আপলোড করে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করার মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনে বয়স কমানো যাবে।

প্রশ্নঃ অনলাইনে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন করব?

উত্তরঃ প্রথমে আপনি https://bdris.gov.bd/ ওয়েবসাইটে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন মেন্যুতে যান। তারপর সঠিক জন্ম তারিখ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন। সবশেষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ আপলোড করে আবেদনটি সাবমিট করুন। তারপর পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আবেদনটি প্রমাণপত্র সহ ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা অফিসে জমা দিন।
জন্ম নিবন্ধন নিয়ে আরো তথ্য 

 উপসংহার

আপনাকে বলে রাখি আগের করা জন্ম নিবন্ধনগুলোতে বয়স ভুল হওয়া স্বাভাবিক একটি বিষয়,আরো জানিয়ে রাখছি প্রথমবার এসব জন্ম নিবন্ধনগুলো হাতে লেখা হয়েছিল তারপর ম্যানুয়েলি এগুলো ডাটা এন্ট্রি দিয়ে অনলাইনে আপলোড করা হয়  তাই তাদের এসব  ভুলে ভুল হতে পারে তাই আপনি সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করবেন তাই নতুনভাবে জন্ম নিবন্ধন করা যাবে না । জন্ম নিবন্ধনে বয়স সংশোধন বিষয়ে আশা করি   পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। তারপরও কোন প্রশ্ন থাকলে নিচের প্রশ্নগুলো দেখতে পারেন, কমেন্টে জানাতে পারেন বা সরাসরি ফেইসবুক পেইজে যোগাযোগ করুন। জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে কোন প্রশ্ন? কমেন্ট করুন, দ্রুত উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url